পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ১০টি মসজিদ

ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মীয় উপসনালয় হল মসজিদ। কিন্তু মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয়, এটি মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবেও বিবেচিত। ইসলামি শাসনামলে মসজিদ থেকেই পরিচালিত হতো রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। বর্তমানে ইসলামের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে নির্মিত হয়েছে বহু মসজিদ। তাই, মসজিদ নির্মাণে পবিত্রতার পাশাপাশি সৌন্দর্যের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়ে থাকে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি মসজিদ সম্পর্কে।

১০. শেখ জায়েদ গ্রান্ড মসজিদ

শেখ জায়েদ মসজিদটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত। এটি বর্তমানে আবুধাবীর সবচেয়ে বড় মসজিদ যা ৩০ একর জায়গার উপর নির্মিত। প্রায় তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিক মিলে তৈরি করা এই মসজিদে রয়েছে ২৭৯ ফিট উচ্চতার বিভিন্ন আকারের সাতটি গম্বুজ ও ৩৫১ ফিট উচ্চতার চারটি মিনার। এই মসজিদের ব্যবহৃত কার্পেটটি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় কার্পেট। মসজিদটিতে ৪১ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীর এমন এক বিস্ময়কর নিদর্শন যা বিশ্বের সব ইসলামিক কালচারের এক নান্দনিক প্রতিচ্ছবি।

৯. শাহ ফয়সাল মসজিদ

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের উত্তরে মনোহর মারগালা পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই মসজিদটি। বেদুইন তাঁবুর আকৃতির এ মসজিদটিকে সমসাময়িক ইসলামী স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মসজিদটির নকশা করেন বিখ্যাত তুর্কি স্থপতি ভেদাত দালোকে। মসজিদের দেয়াল থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত সূর্যের আলো প্রবেশের এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, মনে হয় সর্বত্র লাইট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ ফয়সালের আর্থিক সহায়তায় এটি নির্মাণ হয় তাই বাদশাহ ফয়সালের নামের স্মরণে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে।  সারা পৃথিবীতে এটি ইসলামাবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি মসজিদ

৮. দিল্লী জামে মসজিদ

মোঘল স্থাপত্যশৈলী এবং ইসলামিক শিল্পকলার এক অনন্য নিদর্শন দিল্লী জামে মসজিদ। ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৬ সালে মুঘল সম্রাট শাহ জাহান কর্তৃক নির্মিত এই মসজিদে রয়েছে ৪১ মিটার সুউচ্চ দুটি মিনার যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে। মূল প্রার্থণা কক্ষের প্রবেশপথে ফার্সি আর আরবী ক্যালিগ্রাফিগুলো মসজিদের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যকে করেছে আরো বেশি আকর্ষণীয়। লাল বেলেপাথর আর সাদা মার্বেলের সমন্বয়ে নির্মিত এই মসজিদ প্রায় ৪০০ বছর ধরে গৌরবের সাথে টিকে আছে।

৭. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ

সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতীয় হাসান মসজিদ মরক্কোর বৃহত্তম এবং বিশ্বের অন্যতম এক বৃহত্তম মসজিদ। মসজিদটির একাংশ পানির উপর অবস্থান করছে তাই একে ভাসমান মসজিদও বলা হয়। মরক্কোর সবথেকে বড় শহর ক্যাসাবালাঙ্কায় আটলান্টিক মহাসাগরের তিরে অবস্থিত মসজিদটি। হস্ত-খোঁদাই শিল্পের বিস্তৃত কাজ, সরু কারুকার্যমণ্ডিত মার্বেলের দেয়াল এবং ২১০ মিটার উঁচু দৃষ্টিনন্দন মিনার যা দ্বিতীয় হাসান মসজিদকে নান্দনিক এক স্থাপত্যশৈলীতে রূপান্তর করেছে। স্থাপনাটি ইসলামী স্থাপত্য এবং মরক্কীয় উপাদানগুলিকে মিশ্রিত করে নির্মাণ করা হয়েছে।

৬. সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ

ওমানের রাজধানী মাসকটে ওমান সুলতানাতের নিদর্শনস্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ। এটি ওমানের সবচাইতে জনপ্রিয় ও বড় মসজিদ। এই মসজিদের পাঁচটি মিনার মূলত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভকে নির্দেশ করে। মসজিদের নকশায় ইসলামিক আভিজাত্যের ছোঁয়া আনতে ব্যবহার করা হয়েছে কারুকার্যমণ্ডিত মোজাইক, সূক্ষ্ম স্ফটিক এবং হস্তনির্মিত আরো বিশদ কিছু। তবে সুলতান কাবুস মসজিদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এর অভ্যন্তরে থাকা হাতে তৈরি বিশাল কার্পেট যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্পেট। এই মসজিদটি একদিকে যেমন ওমান সুলতানাতের ঐতিহ্য বহন করছে ঠিক তেমনই এর নান্দনিক সোন্দর্য্যে দর্শনার্থীদের বিমোহিত করছে।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি মুসলিম দেশ

৫. সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ

ব্রুনাইয়ের রাজধানী সেরি বেগাওয়ানে অবস্থিত সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সবচাইতে সুন্দর মসজিদ নামে খ্যাত। ১৯৬৮ সালে নির্মিত এই মসজিদের মূল গম্বুজটি পুরোটাই সোনায় মোড়ানো। মসজিদের অভ্যন্তরভাগে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার মোজাইক, রঙিন স্বচ্ছ কাচ, খিলান প্রভৃতি। ব্রুনাই নদীর তীরের কাছে একটি কৃত্রিম হ্রদে মসজিদটির অবস্থান। কৃত্রিম হৃদের উপর নির্মিত হওয়ায় সোনালী গম্বুজের প্রতিচ্ছবি এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এই মসজিদটি ব্রুনাইয়ের ইসলামিক স্থাপত্যের পাশাপাশি ইসলামিক ধারণা ও বিশ্বাসের এক প্রতিফলন।

৪. সুলতান আহমেদ মসজিদ বা নীল মসজিদ

তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সুলতান আহমেদ মসজিদ অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম সুলতান আহমেদের উদ্যোগে ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। দৃষ্টিনন্দন নীল গম্বুজ ও মসজিদের দেয়ালের নীল রঙের টাইলসের কারণে এটি ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটির মূল একটি গম্বুজের পাশাপাশি আটটি গম্বুজ এবং মসজিদের চার কোণে চারটি ও পেছনে আরো দুটিসহ মোট ছয়টি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মিনারগুলো দূর থেকে দেখতে পেনসিলের মতো মনে হয়। যদিও এটি বর্তমানে মসজিদ হিসেবেই ব্যবহৃত হয় তবে প্রার্থণার সময় ব্যতীত অন্য সময়ে দর্শনার্থীদের ঘুরে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়।

৩. আল আকসা মসজিদ

আল আকসা মসজিদ জেরুসালেমের পুরনো শহরে অবস্থিত ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। এটি মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দেস নামেও পরিচিত। আল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম কেবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। এই মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। উল্লেখ্য রাসুল (সা.) এই মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে মিরাজের সফরে গিয়েছিলেন। তাই ইসলামের ইতিহাসে আল-আকসা মসজিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাশাপাশি এটি ইসলামী স্থাপত্যের অন্যতম সৌন্দর্য্যপূর্ণ একটি মসজিদ।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি মুসলিম দেশ

২. মসজিদে নববী

মসজিদে নববী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদ যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। তাই নবীজির নাম আনুসারে এই মসজিদটির নামকরণ করা হয় মসজিদে নববী। মুহাম্মদ (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মিত হয়।। এটি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এবং তৃতীয় বৃহৎ মসজিদ। মুহাম্মদ (সা.) নিজে ব্যক্তিগতভাবে মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। সেসময় এই মসজিদ সম্মিলনস্থল, আদালত ও মাদ্রাসা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তীকালের মুসলিম শাসকরা মসজিদ সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করেছেন। ১৮৩৭ সালে প্রথম এই মসজিদের গম্বুজটিতে সবুজ রং করা হয়।

১. মসজিদ আল-হারাম

সৌদি আরবের মক্কা শহরে অবস্থিত মসজিদুল হারাম ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রধান মসজিদগুলোর একটি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সুন্দর মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। এই মসজিদের একদম মধ্যভাগেই আছে ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবাশরীফ যেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলিম হজ করতে আসেন। রাসুল (সা.) কর্তৃক মক্কা বিজয়ের পর কাবাকে কেন্দ্র  করেই আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে এই সুবিশাল মসজিদটি। ৬৯২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে প্রথম বড় আকারের সংস্কার সাধিত হয়। অষ্টম শতাব্দীর শেষ নাগাদ মসজিদের পুরনো কাঠের স্তম্ভগুলোর বদলে মার্বেলের স্তম্ভ স্থাপন করা হয় এবং নামাজের স্থান বৃদ্ধিসহ নতুন মিনার যুক্ত করা হয়। ১৯৫৫ সালের পর সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ মসজিদটির ব্যাপক সংস্কারকাজে হাত দেন। তারপরে বাদশাহ ফাহাদ হারাম শরিফের বাহিরের দিকে সংস্কার করেন।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন